সংবাদ শিরোনাম :
তামাকের ব্যবহার কমাতে শক্তিশালী কর পদক্ষেপ ও আইনের বিকল্প নেই জামালপুর রেলওয়ে ওভারপাস প্রকল্প ভূমি অধিগ্রহণের টাকা নিয়ে ভাসুরের সাথে ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর বিরোধ  মাদকের গডফাদারদের ধরে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ব্যবসায়ী ও স্বেচ্ছাসেবীদের উদ্যোগে বিরেন্দ্র খাল পরিস্কারে ব্যাপক সাড়া জামালপুরকে দুর্নীতিমুক্ত করার ঘোষণা দিলেন নবাগত জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগম  রাজশাহীর বাঘমারায় হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত রাসুলের (স.)আদর্শের বিকল্প নেই-ধর্ম উপদেষ্টা লংগদুতে ২য় শ্রেণির মাদ্রাসার ছাত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগ  পটুয়াখালীতে আগামীকাল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৪র্থ ধাপের নির্বাচন,কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে ভোট গ্রহনের সরঞ্জাম প্রিয়জনের খবর নিতে পারেনি অনেকে রিমালে অচল ফোন-ইন্টারনেট ব্যাকআপ না থাকায় বিপর্যয়
নোটিশ :
দৈনিক সত্যকন্ঠ অনলাইন নিউজ পোর্টালে আপনাকে স্বাগতম। আপনার যেকোন বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য এখনই যোগাযোগ করুন (বিজ্ঞাপন ডেস্ক) : মোবাইল- ০১৬০০৩১০২৯১, ০১৫৬৮-৬৮৬৫৫৩।

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বিজয়ের ৫২ বছরেও বীরঙ্গনার স্বীকৃতি পায়নি জহুরা : মানবেতর জীবনযাপন

স্টাফ রির্পোটার / ৯০ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

 

মো: জাফরুল সাদিক,বগুড়া প্রতিনিধি ঃ বয়স হইছে। অসুখ-বিসুখের শেষ নাই। বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বিজয়ের ৫২ বছরেও বীরঙ্গনার স্বীকৃতি পায়নি জহুরা। এখন তার মানবেতর জীবনযাপন। অন্য দশজন নারীর মতই স্বাভাবিকভাবেই চলছিল ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের বাঁশহাটা এলাকার জহুরা-হাবিবুর রহমানের দাম্পত্য জীবন। স্বামী-স্ত্রী মিলে কোনো মত নুনভাত খেয়ে জীবনযাপন করলেও তাঁর ইজ্জতের বিরুদ্ধে কটুকথা বলার কারও দুঃসাহস ছিলোনা সে সময়। ১৯৭১ সালের একদিন পাক হানাদারা বাহিনীর লোভ-লালসার শিকারে সর্বস্বহারা জহুরার সংসারে নেমে আসে এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। শুরু হয় প্রতিবেশী ও স্বজনদের ঘৃণা। দীর্ঘ তিনমাস বাপের বাড়িতে চিকিৎসা শেষে স্বামীর সংসারে ফিরে এসে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন শুরু করলেও অদ্যবধি প্রতিবেশীরা বিভিন্নভাবে লাঞ্ছিত করে আসছেন। বিজয়ের ৫২ বছরেও সর্বস্ব হারানোর বেদনা আর স্বীকৃতি না পাওয়ার দুঃশ্চিন্তায় অনবরত কান্নায় চোখের পানিতে দুইটা চোখের দৃষ্টি প্রায় হারানো পথে। শেষ নিস্বাসত্যাগ করার আগে বীরঙ্গনার স্বীকৃতি পেলে মরেও শান্তি পেতেন।
সরেজমিনে গেলে, জহুরা বেগম মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তাঁর সাথে পাক হানাদার বাহিনীর ঘটে যাওয়া অমানবিক নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিঁনি কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। জহুরা বেগম জানান, সর্বস্ব হারানোর কারণে তখন এলাকায় তাঁকে নিয়ে উপহাস ও কটুক্তি করা হতো। সেই দুঃখে দুইকন্যা সন্তানকে নিয়ে দীর্ঘদিন বগুড়া শহরের বিভিন্ন বাসা বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতেন। ২০০৪ সালে প্রথম বারের মতো জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য হালনাগাদ করতে আসলেও সেময় বাসাতে না থাকার কারণে অন্য ভাড়াটিয়াদের দেওয়া তথ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজের ছবি ঠিক থাকলেও নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্ম তারিখ এবং জন্ম সাল ভূল লিপিবদ্ধ হয়েছে। মূলত তার নাম জহুরা বেগম, পিতার নাম-মৃত ময়েজ প্রাং এবং মাতার নাম-মৃত আয়মন বিবি। সেখান থেকে ফিরে এসে অন্যের দেওয়া আশ্রয়ে কয়েকটি ঢেউটিন দিয়ে ঝুঁপরী ঘরে বসবাস শুরু করলেও নেই সুপীয় পানি ও পয়নিষ্কানের ব্যবস্থা। জাতীয় পরিচয়ত্রের ভূল তথ্যের কারণে উপজেলা নির্বাচন অফিসে সংশোধনের জন্য আবেদন করলেও আজও তার কোনো সমাধান পাননি। নারী মুক্তিযোদ্ধার (বীরঙ্গনা) দাবি করার বিষয়ে জানতে চাইলে ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ০৫.৫০.১০৮১.০০০.১৭.০০২.১৭-১১০৭ স্মারকের প্রেক্ষিতে ৩২.০১.১০৮১.০০০.০২৫.০২.১৭/১১৮ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭খিঃ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে বীরঙ্গনা স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাজনীন আকতার ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাঃ মোছাঃ হাছিনা আখতার স্বাক্ষরিত একটি তদন্ত রির্পোট গণমাধ্যমকর্মীর কাছে উপস্থাপন করেন তিঁনি। স্থানীয়ভাবে তাঁর বীরঙ্গনার স্বীকৃতির জন্যে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সারিযাকান্দি উপজেলা কমান্ডের কাছে চিঠি লেখেন ভেলাবাড়ী ইউনিয়ন কমান্ড মরহুম সোহারাব হোসেনের স্বাক্ষরিত একটি দরখাস্তও উপস্থাপন করেন । তাছাড়া গ্রামের প্রবীন ব্যক্তিবগের্র সাথে কথাবলে, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর দ্বারা নির্যাতন ও ধর্ষিত হওয়ার সত্যতা পাওয়া যায়। স্থানীয় বাঁশহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক নূর মোহাম্মদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, বাড়ীর পাশে বাঙ্গালী নদীর তীরে কাশবনে পাকহানাদার বাহীনা ক্যাম্প করে ছিলেন, সেখানে উঁত পেতে থাকা পাক ক্যাপ্টিন সোহেল খান ও তার দূসরদের লোভ-লালসার শিকার হয়ে জহুরা তার সম্ভম হারান। তিনি আরও জানান, অন্য দশজন মুক্তিযোদ্ধার মত দেশ স্বাধীনের জন্যে তিঁনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পেড়েছিলেন কিন্তু দুঃভাগ্যবসত তার নামও লিপিবদ্ধ হয়নি। বাঁশহাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত আরেক সহকারী শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক (ডাবলু), প্রতিবেশী আব্দুর রাজ্জাক রেজা জানান, ১৯৭১ সালে পাকহানাদার বাহিনীর লোভ-লালসার শিকার হয়ে জহুরা তাঁর সম্ভম হারিয়েছেন। মরহুম ছাত্তার প্রামাণিকের স্ত্রী রুপিয়া এবং মরহুম কবেজ প্রামাণিকের স্ত্রী কোহিনুর জহুরার সঙ্গে পাক হানাদার বাহিনীর অমানিক নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছেন। জহুরার ছোট মেয়ে শিউলী জানান, তাদের দুই বোনের জাতীয় পরিচয়পত্রে মায়ের নাম জহুরা লিপিবদ্ধ রয়েছে। মায়ের বীরঙ্গনার স্বীকৃতিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি উপস্থাপন করা হলেও অজ্ঞাত কারণে আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। বীরঙ্গনার স্বীকৃতি না পাওয়ার দুঃশ্চিন্তায় মায়ের দু’চোখের দৃষ্টি কমে যাচ্ছে। ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য নজির হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন এবং জাতীয় পরিচয়পত্রে লিপিবদ্ধ ভূল তথ্য সংশোধন করে তাঁকে নারী মুক্তিযোদ্ধার (বীরঙ্গনার) স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সহযোগীতা কামনা করেন।
       এব্যাপারে সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: তৌহিদুর রহমান জানান, আমরা জহুরা বেগমের আবেদনটি  পেয়েছিলাম। আবেদন প্রাপ্তির পরবর্তিতে তদন্ত করে দেখেছি তার নারী মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার যে সত্যাতা সে টি পেয়েছি। আমরা আবার পূনরায় যাচাই বাছাই করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পেরন করব। যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাকে গেজেট ভুক্ত করে নারী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়।
সারিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: রেজাউল করিম মন্টু বলেন,যখন সরকার বীরঙ্গনার স্বীকৃতি দিয়েছে।সুযোগ-সুবিধার সৃষ্টি করেছে তখন থেকে চেষ্টা করেছে এখন পর্যন্ত হয়নি । আমি ব্যাক্তিগত ভাবে খোঁজ খবর নিয়ে দেখেছি সে একজন বীরঙ্গনা। আমি আশা করব সরকারের যতগুলো সংস্থা আছে তাকে বীরঙ্গনার স্বীকৃতি দেয়ার জন্য যাবতী ব্যবস্থা গ্রহন করবে এবং তাকে বীরঙ্গনার স্বীকৃতি দিয়ে সঠিক মূল্যায়ন করবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category